জানালার ঝাপসা কাচের ভেতর দিয়ে সূর্যের আলো চোখে পড়তেই নুভার ঘুম ভাঙলো। ঘড়ির দিকে তাকাতেই বুঝতে পারলো অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। তড়িঘড়ি করে গায়ের কাঁথা সরিয়ে সে বিছানা থেকে উঠলো। বিছানা থেকে ওঠা মাত্রই মা মা করে চিৎকার করতে লাগলো।
নুভা খুবই ভাগ্যবতী বলতেই হয়। বাবা-মা, চাচা-চাচী সহ যৌথ পরিবারে থাকে সে। তাই কখনো কোন আবদারের অভাব হয় না। যেকোন কাজ না চাইতেই হয়ে যায়। আজ নুভার চাকরির ইন্টারভিউ আছে একটা৷ ইতোমধ্যে তার দেরি হয়ে গেছে। তাই এত তাড়াহুড়ো। না হয় তো তাকে ডেকেও ঘুম থেকে তোলা মুশকিল হয়ে যায়।
তার মা এখনো তার ডাক শোনে নি। তাই সে ডাকতে ডাকতে বাবা-মায়ের রুম পর্যন্ত গেল। মা রুম থেকে বেরিয়ে এসেই ধমক দিয়ে বললেন, "আস্তে ডাকতে পারিস না? তোর বাবা এখনো ঘুমাচ্ছে৷" নুভা মাকে বললো, " মা আমার জামার সেটটা বের করে রেখেছি। একটু ইস্ত্রি করে দাও না।" এই বলেই সে হুট করে ওয়াশরুমে চলে গেল৷ এইদিকে তার মা টানা ১০ মিনিট যাবত লেকচার দিল কেন সে গতকাল রাতে সব ঠিক ঠাক করে রাখি নি। কথা শোনানোর পরক্ষনেই মা জামা ইস্ত্রি করে দিতে লাগলো। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই নুভা তৈরি হয়ে নাস্তা করে বেরিয়ে পড়লো।
নুভা মোটেই সিরিয়াস কোন মেয়ে নয়। বরাবরের মতই সব ব্যাপারেই তার গা ছাড়া ভাব। বের হয়ে সাথে সাথেই উবারে রাইডার খোঁজা শুরু করলো। খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না। রাইডার তাকে জায়গামত একদম অফিসের সামনেই নামিয়ে দিল।
ইন্টারভিউ তিন তলায়। রিসিপশনে জিজ্ঞেস করে তিন তলায় ওঠা মাত্রই ইন্টারভিউ রুমের সামনে চাকরি প্রার্থী অনেককেই দেখতে পেল। নুভা মুচকি হেসে একজনের পাশে গিয়ে বসে পড়লো এবং যথাসম্ভব নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। আশেপাশে তাকিয়ে দেখতে পেল সবাই কিছু না কিছু পড়ছে। কেউ মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে, কেউ বা বই এর পাতায় শেষ বারের মত ঢুঁ দিচ্ছে। এসব দেখে তার নার্ভাসনেস যেন ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সে আর কোন দিকে না তাকিয়ে দুহাত মুঠ করে বসে থাকলো। কিছুক্ষণ পরই এক ভদ্র মহিলা এসে ডাক দিলেন। মিস নুভা ছিদ্দিকী আছেন? ডাক শুনতেই সে উঠে দাড়ালো এবং ভদ্র মহিলার পেছন পেছন ইন্টারভিউ রুমের ভেতর গেল। রুমে ঢুকেই দেখতে পেল ইন্টারভিউ রুমে চারজন বয়স্ক ভদ্র লোক বসে আছেন।
নুভা সম্পর্কে আরো একটু বলে নেই। নুভা সব কিছুতেই কেয়ারলেস হলেও তার পরীক্ষার রেজাল্ট দেখে কখনোই সেটা মনে হবে না। বরাবরই পুরো শিক্ষা জীবন জুড়ে তার ভাল রেজাল্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন থেকে অনার্স, মাস্টার্স করেছে। অনার্সে তৃতীয় এবং মাস্টার্সে পুরো ডিপার্টমেন্টে প্রথম। এই রেজাল্ট দেখে নিশ্চয়ই কেউ ভাবতেই পারবেন না যে সে কতটা খামখেয়ালি নিজেকে নিয়ে।
আবার ইন্টারভিউতে ফেরত আসি। ইন্টারভিউ বোর্ডের এক ভদ্রলোক তাকে প্রথম প্রশ্ন হিসেবে বিখ্যাত, " আপনার সম্পর্কে কিছু বলুন" জিজ্ঞেস করলেন। নুভা এবার মনে কিছুটা সাহস পেল। সাহসিকতার সাথে সে একদম বিস্তারিত সব বললো। একবার সাহস পেয়ে যাওয়ার পর আর কোন প্রশ্ন তাকে আটকাতে পারে নি। নুভা একে একে সব গুলোর উত্তর দিল। ইন্টারভিউ বোর্ডের সবাই তার উত্তরে খুব সন্তুষ্ট ছিল। ইন্টারভিউ শেষ হল আবারো পরিচিত লাইনের মাধ্যমে। একজন ভদ্রলোক বললেন, " আমাদেরকে কল করবেন না। আপনি সিলেক্ট হলে আপনাকে কল করে জানানো হবে। আপনি এবার আসতে পারেন। আর হ্যাঁ, যাওয়ার সময় দরজা বন্ধ করে যাবেন। " রুম থেকে বেরিয়ে আসার সাথে সাথে অন্যান্য প্রার্থীরা যখনই জিজ্ঞেস করতে আসবে ভেতরে কি হল তখনই নুভা তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে পড়লো। সাধারণত ভাইভা রুম থেকে বের হলে এমনটাই হয়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে নুভারও এমন অভিজ্ঞতা রয়েছে। রুম থেকে বের হলেই সবাই এসে জিজ্ঞেস করা শুরু করতো কি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছে, কোন কোন বিষয় থেকে জিজ্ঞেস করেছে এমন কি উত্তর কোথায় আছে সেটা জিজ্ঞেস করতেও ভুলতো না। এসব ঝামেলায় না পড়ার জন্য সে এখন আর কোন ভাইভা দিয়ে সেখানে বিন্দু মাত্র অপেক্ষা করে না। যাইহোক, নিচে নেমেই নুভা আবার উবার ডেকে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
চলবে.............
আপনি যদি এই ব্লগে নতুন হয়ে থাকেন তাহলে আমার বাকি লিখা গুলো পড়ে নিতে পারেন। আর হ্যাঁ অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না কেমন লাগলো। আপনার মন্তব্য আমাকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। ধন্যবাদ। 😊
6 মন্তব্যসমূহ
Splendid :)
উত্তরমুছুনSplendid :)
উত্তরমুছুনThank you bondhu 💓
মুছুনGood going👍
উত্তরমুছুনধন্যবাদ বন্ধু। 😊
উত্তরমুছুনঅসাধারণ হয়েছে।
উত্তরমুছুনIf you have any suggestions please let me know. It will be my pleasure to know your opinions. 😊