রোনা উত্তর পৃথিবীতে নিশ্চিত ভাবে অনেক পরিবর্তন আসবে। করোনাকালীন সময়ে আমরা সবাই কম বেশি অনেক নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি। এই অভিজ্ঞতাগুলি করোনা পরবর্তী সময়ে আমাদের অনুভূতি এবং বিশ্বাসের প্রতি অনেক বেশি অবদান রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। আজকে আমি এই মহামারী কালীন  সময়ে প্রাপ্ত আমার কিছু ব্যক্তিগত উপলব্ধি তুলে ধরার চেষ্টা করবো যেগুলো সবার জীবনের সাথেই কোন না কোন ভাবে মিলে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।

 

১. অহংকারের কোন সময় নেই

মহামারীজনিত রোগ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযপনে (অন্তত লকডাউনের সময়কালে) উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। রোগ কখনো ধনী গরীব দেখে হয় না। এই উপলব্ধি নিশ্চিতভাবে সবারই হয়েছে।কারন এই মহামারী  সমাজের সকল স্তরের মানুষকে একই শ্রেনীতে নিয়ে এসেছে। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, মানুষ হিসাবে, যতই শক্তিশালী বা পরাধীন হোক না কেন, আমরা সকলেই ঝুঁকির মধ্যে থাকতে পারি।

 

. কঠোর স্বাস্থ্যবিধির অনুসরণ

স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। করোনা মানুষকে অনেক নতুন অভ্যাস শিখিয়েছে। সামাজিক দূরত্ব শুরুর পর থেকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে দেওয়া হাত ধোয়ার সঠিক কৌশলটি হঠাৎ করেই  অনেক গুরুত্ব পেয়েছে। অথচ এটি কিন্তু মানুষের দৈনন্দিন জীবনের  অংশ হওয়ার কথা ছিল। মোটামুটি সকল স্তরের মানুষ এই অভ্যাসটিকে আপন করে নিয়েছেন। যেটি কিনা সুরক্ষার জন্য একটি বড় অস্ত্র ,  জীবনরক্ষক বলা যায়! মহামারী কালীন সময় গড়ে ওঠা এই দুর্দান্ত অভ্যাসগুলি প্রাকৃতিক অভ্যাসে পরিণত হওয়া উচিত। যাতে  করে মানুষ এই অভ্যাস গুলো  আজীবন তাদের আলিঙ্গন করে। আর এতে করে ভবিষ্যতে এধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় মানুষ কিছুটা হলেও পূর্বপ্রস্তুত থাকবে বলে আমার বিশ্বাস।

 

৩. আপন মানুষদের প্রয়োজনীয়তা

সারা বছর মানুষ নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন। তাই সেইভাবে করে আপন মানুষদের সময় দেওয়া হয়ে ওঠে না। এই সময়টায় যেহেতু মানুষ নিজের বাড়িতেই অবস্থান করেছেন , নিঃসন্দেহে আপন মানুষদের গুরুত্ব আরো ভাল ভাবে অনুধাবন করেছেন।

 

৪. বাড়ির খাবারের প্রয়োজনীয়তা

করোনা আমাদের আরো একবার বাড়িতে তৈরি খাবারে প্রয়োজনীতা মনে করিয়ে দিয়েছে। পরিবারগুলি একসাথে রান্নায় বেশি সময় ব্যয় করতে সক্ষম। আমি দাদির রেসিপি এবং স্যাভারিং স্বাদযুক্ত খাবার চেষ্টা করার সুযোগ নিয়েছি। এইরকম আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতাগুলি প্রতিদিন না হলে প্রায়শই পর্যাপ্ত পরিমাণে পুনরাবৃত্তি করা উচিত।

 

. যোগাযোগের বিকল্প মাধ্যম

এই মহামারীর সময়ে সরাসরি অফিস কিংবা মিটিং এ অংশগ্রহণ সম্ভব ছিল না। তাই মানুষ বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজে নিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার ছাড়াও, বাড়ি থেকে কাজ করা লোকদের ঘরে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের প্রয়োজনীয়তা এনেছে। অনেকে ঘর থেকে টিউশনও দিচ্ছেন। যার রেশ নিঃসন্দেহে করোনা পরবর্তী সময়েও রয়ে যাবে।

 

৬.মুদি কেনাকাটার গুরুত্ব

এই সময়ে মানুষ  মুদি কেনাকাটার  গুরুত্ব খুব ভাল ভাবেই বুঝতে পেরেছে। আপনি অনলাইনে কেনাকাটা করেন কিংবা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সরাসরি দোকান থেকে কেনাকাটা করেন, ঘরে খাবার মজুদ থকার গুরুত্ব করোনা আমাদের ভালভাবেই শিখিয়েছে।

 

৭.জমানো অর্থের প্রয়োজনীয়তা

বিপদে জমানো অর্থের প্রয়োজনীয়তা করোনা আমাদের খুব ভাল ভাবেই মনে করিয়ে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত।

 

৮.নিজেকে সময় দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা

যে সমস্ত মানুষ তাদের আত্ম-যত্নকে অবহেলা করে থাকেন, তারা এই সময়টাতে নিজেকে সময় দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা খুব ভাল ভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছেন। বাড়িতে বেশি সময় ব্যয় করে , স্ব-যত্নের জন্য নিঃসন্দেহে অনেক বেশি সময় পাওয়া গিয়েছে। আপনি যদি সাম্প্রতিক সময়ে নিজের প্রতি যত্নবান হওয়ার অভ্যাসটি তৈরি করে থাক তবে করোনা পরবর্তী স্ময়েও এটিকে অবহেলা করবেন না।

 

৯.জীবনের লক্ষ্য

বাড়িতে আরও বেশি সময় ব্যয় করা নিঃসন্দেহে ব্যক্তিগত জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণের একটি আদর্শ সুযোগ। আপনার জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানুন এবং আপনি যা চান তা অর্জনের জন্য সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।

 

১০.ব্যক্তিগত উন্নয়ন

এই সময়টায় অনেকেই নিজের স্কিল ডেভলপমেন্টের দিকে মনোযোগী হয়েছেন। বিশেষ করা যারা ছাত্র আছেন তারা বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে বিভিন্ন কোর্স করে ফ্রিতে বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট অর্জন করে নিচ্ছেন যা নিঃসন্দেহে ভবিষ্যতে কর্মক্ষেত্রে তাদের সাহায্য করবে।

 

আমি নিশ্চিত যে, লকডাউনের সময়টাতে আপনিও কিছু নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন। এই কঠিন সময়, মানুষের জীবনযাত্রা অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। তাই এই কঠিন সময়কে নেতিবাচক ভাবে না দেখে ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে  প্রস্তুত করার সময় হিসেবে বিবেচনা করুন।





আপনি যদি এই ব্লগে নতুন হয়ে থাকেন তাহলে আমার বাকি লিখা গুলো পড়ে নিতে পারেন। আর হ্যাঁ অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না কেমন লাগলো। আপনার মন্তব্য আমাকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। ধন্যবাদ। 😊